নিয়ম-নীতি না মেনে পুঁজিবাজারে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং তথাকথিত Sponsor/Director-দের ইচ্ছামতো ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে লিস্টেড কম্পানিগুলো পরিচালনা করার দিন শেষ। সরকারপ্রধানের কঠোর নির্দেশ এবং বিএসইসির কঠোর অবস্থানের কারণে সবাইকে কমপ্লায়েন্স মেনে listed company পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে।
যেসব কম্পানি ২%-৩০% শেয়ার ধারণ আইনের বাধ্যবাধকতা যথাযথ ধারণ করেননি, কমপ্লায়েন্সের তোয়াক্কা করেননি, তাঁদের সবাইকে এখন কমপ্লায়েন্স মেনে কাজ করতে হচ্ছে। ভালো ভালো কম্পানি সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কম্পানি পরিচালনা করছে, যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর জন্য অত্যন্ত সুখবর। ডিসক্লোজারের ভিত্তিতে নতুন নতুন কম্পানি listed হচ্ছে। অডিটরদের মিথ্যা তথ্য, ইস্যু ম্যানেজারদের প্রতারণা, আন্ডাররাইটারদের জবাবদিহিহীনতা, স্পন্সরদের প্রতারণা, asset valuation কম্পানির জমির দাম অতিরঞ্জিত করা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে শেয়ার বিক্রি করার দিন ফুরিয়ে এসেছে। ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য, over valuation, paid up capital rise, vat tax payment, রাতারাতি বাজারে আসার আগে কম্পানির EPS বেড়ে যাওয়া, পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাওয়া, reserve বেড়ে যাওয়া, কম্পানির productive পণ্যের মজুদ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখানো এখন আর সম্ভব নয়। এক্সচেঞ্জ এবং IPO process কমিটিতে সব ধরা পড়ে যাচ্ছে, খুব বেশি লুকানোর সুযোগ নেই। আইপিও অনুমোদনের ব্যাপারে বিএসইসি ভালো টেকসই কম্পানিকে উৎসাহিত করছেন এবং অপরদিকে আজেবাজে কম্পানিকে কঠোরভাবে scrutiny করে reject করে দিচ্ছেন।
আমি এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসি উভয়কে বিনিয়োগকারীদের আবার ফিরিয়ে এনে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার এই পদক্ষেপগুলোকে সাধুবাদ জানাই। এতে বাজারে ভালো মৌলভিত্তিক প্রাইভেট কম্পানিগুলো আসতে উৎসাহিত হবে। অপরদিকে আজেবাজে কম্পানি অনুৎসাহিত হবে। আমাদের এই অবস্থান থেকে একেবারেই সামান্যতম ছাড় দেওয়া চলবে না। বিভিন্ন listed company, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে, প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। যারা শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের আর এই সুযোগ দেওয়া যাবে না।
জেড ক্যাটাগরির কম্পানি, নন-পারফরম্যান্স কম্পানি, small paid up কম্পানি, যাদের মূলত কোনো ব্যবসা নেই, তাদের ব্যাপারে বিএসইসির বর্তমান পদক্ষেপকে আমি সময়োচিত ও সঠিক বলে মনে করি। যারা ২%-৩০% পালন করেনি, তাদের ব্যাপারে বাস্তব সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই সকল বোর্ড পুনর্গঠনে সৎ, যোগ্য ও committed স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। যাঁরা কম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থ দেখবেন। স্বাধীন পরিচালকগণ এমনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, যাতে তাঁদের ওপর বিনিয়োগকারীদের এবং সর্বোপরি পুঁজিবাজারের একটি আস্থার অবস্থান তৈরি হয়। যদি কোনো কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে এমন প্রফেশনালদের নিয়োগ দেবে যাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করবেন।
Emotionally কারো সুপারিশে এ সকল নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। স্বাধীন পরিচালক ও প্রশাসক নিয়োগের তিন মাসের মধ্যে তাঁদের কাজ হবে সকল প্রকার প্রভাববলয় থেকে বের হয়ে কম্পানির সঠিক অবস্থা বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরা। কম্পানি প্রডাকশনে আছে কি না, সম্পদ কী আছে, কম্পানিটি বর্তমানে যেখানে অবস্থান করছে সে জমি নিজেদের কি না, নিজেদের হলে তার valuation, কম্পানির long-term ও short-term loan কত, Sponsor/Director যাঁরা বর্তমানে আছেন তাঁদের ভূমিকা, যাঁরা কম্পানিতে কাজ করছেন তাঁরা তথাকথিত Sponsor/Director-দের নিজস্ব লোক কি না—এ সবকিছু আমলে নিয়ে তিন মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রকাশ করবেন।
যে সকল বিনিয়োগকারী ২% শেয়ার hold করেন তাঁরা যদি কম্পানি পরিচালনায় আসতে চান তাঁদের automatically কম্পানি পরিচালনা পরিষদে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। অথবা কোনো ইনস্টিটিউশন যদি অনেক বেশি শেয়ার hold করে তাদের শেয়ার অনুপাতে ওই কম্পানির বোর্ডে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রভাবশালী কারো আপত্তি এই সকল পরিচালক নির্বাচনে যাতে বাধা না হয়। বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে ব্যাংক, এনবিএফআই, লিজিং কম্পানিগুলোতে। বিএসইসিকে এখানে সবচেয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, ব্যাংকব্যবস্থা ভালো থাকলে পুঁজিবাজার ভালো থাকবে। কারণ ব্যাংক, এনবিএফআই, লিজিং ও বীমা খাতের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার বেশি। সিংহভাগ শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা এই সকল কম্পানিতে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না। কাঠামোগতভাবেই ব্যাংক পরিচালিত হয় ডিপোজিটরদের টাকায়। বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি, তথাকথিত স্পন্সর/ডিরেক্টররা ব্যাংকের মালিক বলে যা ইচ্ছা তা করেছেন, জনগণের টাকা লুটপাট করেছেন। তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট নিজেদের মনমতো সাজিয়েছেন, চাকরির ক্ষেত্রে নিজেদের অযোগ্য লোককে প্রাধান্য দিয়েছেন, স্বাধীন পরিচালক নিজেদের পছন্দমতো মনোনয়ন দিয়েছেন, যাঁরা শুধু তথাকথিত Sponsor/Director স্বার্থ রক্ষা করেছেন। আমি আবার বলছি, ব্যাংকের টাকা ডিপোজিটরের টাকা এবং ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে অনেক বেশি। ২০০৯-১০-এ বিভিন্ন ব্যাংকের অনেক Sponsor/Director কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে ১০ টাকার শেয়ার ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। বর্তমানে সেসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১০-১২ টাকা। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাঁদের পুঁজি হারিয়েছেন, অপরদিকে তথাকথিত ব্যাংকের Sponsor/Director কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পুঁজিবাজারে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই সকল কারসাজির চূড়ান্ত অবসান জরুরি। কোনো ব্যাংকের অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিচালক যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁদেরকে পরিচালনা পরিষদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং এমন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে, যাঁরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যাংক পরিচালনা করবেন। ব্যাংকব্যবস্থার ওপর দেশ ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কেউ যেন মনে না করেন যে উনি ব্যাংকের মালিক। বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাংকের মালিকের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের সবাইকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হতে হবে। পারিবারিকভাবে ব্যাংক পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দৃঢ় নেতৃত্ব ও কঠোর অবস্থানে ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লিজিং ও ইনস্যুরেন্স কম্পানিতে সুশাসন, গুড গভর্ন্যান্স ও করপোরেট কালচার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাতে পুঁজিবাজার বিকশিত হবে, অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখবে এবং সর্বোপরি দেশের সার্বিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
সিরিয়াল ট্রেড, সার্কুলার ট্রেড ও ম্যানিপুলেশনকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক তার অপরাধের পরিমাণ যাচাই করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এটাও বলা যাবে না যে প্রথমবার তাই সতর্ক করলাম। তার অপরাধের পরিমাণ দেখতে হবে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি তাকে দিতেই হবে। মার্কেট ম্যানিপুলেশন, সিরিয়াল ট্রেড ও সার্কুলার ট্রেডের জন্য তাকে যতই সতর্ক করা হোক না কেন সে অপরাধ করবেই, ইতিহাস তাই বলে। চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি।
স্টক এক্সচেঞ্জ এবং এর সার্ভেইল্যান্স ও মনিটরিংকে আরো strong করতে হবে এবং যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা তা পরিচালনা করতে হবে। এই সকল ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবশ্যই ১০০% সৎ ও প্রফেশনাল হতে হবে এবং জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হবে। একজন বিনিয়োগকারী কখন কোন শেয়ার ক্রয় করবেন অথবা বিক্রয় করবেন তা তাঁর একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারী যদি আইনের মধ্যে থেকে স্বাভাবিকভাবে শেয়ার বিক্রি করেন বা তাঁর শেয়ার বিক্রি যদি নির্দিষ্ট কোনো কম্পানির শেয়ারের দাম ফেলে দেওয়ার মোটিভ হিসেবে কাজ না করে তাহলে তিনি কেন শেয়ার বিক্রি করলেন, তার বিও অ্যাকাউন্টের হিসাব ইত্যাদি কি তাঁর কাছে চাওয়া ঠিক হবে? অপরদিকে জেড ক্যাটাগরির কম্পানি, নন-পারফরম্যান্স কম্পানি, small paid up কম্পানি, যাদের মূলত কোনো ব্যবসা নেই কৃত্রিমভাবে সেসব শেয়ারের দাম বাড়ালে এক্সচেঞ্জ সার্ভেইল্যান্স/মনিটরিং শুধু সাদামাটা একটি চিঠি দিয়ে জানতে চায় কেন শেয়ার কিনছেন। এসব কম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে তার জন্য কোনো কোয়ারি হবে না, বিও অ্যাকাউন্টের হিসাব চাওয়া হবে না, এটা ঠিক না। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে হবে। এখানে পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। এই সকল ডিপার্টমেন্টে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের ব্যাপারে বিএসইসিকে অবহিত করতে হবে।
আমি আগেও বলেছি সরকারপ্রধান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করে অর্থনীতি গতিশীল করার সকল সুযোগ করে দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে বাজারকে গতিশীল করে অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখার দায়িত্ব হলো বিএসইসি ও এক্সচেঞ্জের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিএসইসির কঠোর নজরদারি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মনিটরিংয়ের দক্ষতা, Ministry of Finance, Bangladesh Bank, NBR-এর সঠিক পদক্ষেপে এমন একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে, যার সফলতায় আমাদের দেশের সৎ ও সফল শিল্পোদ্যোক্তাগণ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সুদে টাকা না নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে নিজেদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সম্প্রসারণ করবেন এবং দেশের কল্যাণে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন। এতে ব্যাংক স্টার্ট আপ/ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে আরো বেশি লোন দিতে পারবে এবং ব্যাংকব্যবস্থাও ভালো থাকবে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে যে যেখানে নেতৃত্বে আছি নিজ দায়িত্ব সততা ও প্রফেশনালি পালন করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইনশাল্লাহ আমরা সামনে অগ্রসর হচ্ছি। সকল পদক্ষেপ আমাদের সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। সবাইকে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। সবে তো শুরু, যেতে হবে বহুদূর। বছরের পর বছর ধরে পুঁজিবাজারে যে অনিয়ম চলে আসছে তার সমাধান রাতারাতি হবে না। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
BSEC ও Exchange-কে অনেক দিন ধরে জমে থাকা অনিয়মগুলো দূর করতে কাজ করতে হচ্ছে, অনেক অনিয়ম তার মাঝে। কাজ করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হতেই পারে। এটাকে বড় করে দেখা ঠিক হবে না। আমরা ভুলগুলো সুন্দরভাবে ধরিয়ে দিই, তাতে সবাই উপকৃত হবে।
সর্বশেষ বিনিয়োগকারী ভাইদের বলব, পুঁজিবাজারে আপনার বিনিয়োগের মুনাফা যেমন আপনার, তেমনি লোকসানটাও আপনার। তাই অনেক সতর্কতার সঙ্গে আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে emotion-এর কোনো জায়গা নেই। আপনার বিনিয়োগের ভুল সিদ্ধান্তে আপনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ টাকাটা আপনার।
লেখক : সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড
Leave a Reply